ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুরে ডুবে প্রাণ যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। প্রবীণ কর্মচারি সূত্রে জানা গেছে, এটা অনেক পুরাতন পুকুর। পুকুরটি নিয়ে অনেক আগে থেকেই ভৌতিক কাহিনী আছে। কর্মচারীরা জানান,
এই হলের পুকুরে গোসল করতে এসে বিভিন্ন সময় ১০ থেকে ১২ জন মারা গেছে। গত বুধবার বেলা তিনটার দিকে মাহফুজ হায়দার রাহী ও তার বন্ধু শহীদুল্লাহ হলের পুকুরে গোসল করতে যান। এ সময় তারা সিঁড়িতে নামেন। একপর্যায়ে উভয়েই পা পিছলে পানিতে পড়ে যান। সে সময় অন্যদের সহায়তায় মাহফুজের বন্ধু তীরে উঠতে সক্ষম হলেও মাহফুজকে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজির পরও তাকে না পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস-এর কর্মীরা এসে মাহফুজকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মাহফুজকে মৃত ঘোষণা করেন।পুকুর সংলগ্ন ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রবীণ অফিস কর্মকর্তা মো: নজিবুল গণি ভূঁইয়া বলেন, এই হলে তিনি ৩২ বছর ধরে কর্মরত আছেন। পুকুরটিতে এর আগেও মানুষ মারা গেছে। তার চাকরি জীবনে আরো পাঁচজনকে তিনি পুকুরটির পানিতে ডুবে মরতে দেখেছেন। তার নিজের চোখে দেখা এই ঘটনা সবগুলো ২০০০ সালের পর থেকে। ২০০৯ সালে এই পুকুরে সাঁতার কাটার সময় দুপুর বেলায় পানির নিচে তলিয়ে যায় এক ভর্তি পরীক্ষার্থী। এর আগে বন্ধুর সঙ্গে গোসল করতে এসে মারা যান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। ২০০৪ সালের দিকে গোসল করতে নেমে শহীদুল্লাহ হলের এক শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। তার কিছু দিন আগে এক বহিরাগত সকালে ব্যায়াম করে গোসল করতে নামলে ডুবে মারা যায়। কর্মচারী আরো বলেন, আমি শুনেছি আমার চাকরিতে আসার আগে এভাবে সাঁতার কাটার সময় দিনে-দুপুরে ৫ থেকে ৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। তবে এই পুকুরে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারেনি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের অযতœ-অবহেলায় শহীদুল্লাহ হলের পুকুরটির বেহাল দশা বিরাজ করছে। তিনটি ঘাটের মধ্যে একটি ভেঙে গেছে এবং অন্য দুটি বিবর্ণ হয়েছে। এছাড়া পুকুরের পানি অনেকটা ময়লা-আবর্জনা মিশে ঘোলাটে রং ধারণ করেছে। ঘাটের পাশে একটি সাইন বোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে, ‘পুকুরে গোসল ও সাঁতার কাটা নিষেধ।’ গত বুধবার ঘটনার পর পুকুরের চারপাশ ব্যারিকেড অথবা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানান শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা।
হলের কর্মচারীরা জানান, সাঁতার কাটতে গিয়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর পর এখানে গোসল করা ও সাঁতার কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়। যে কর্মচারী নোটিশটি টাঙান তিনি একদিন স্বপ্ন দেখেন তাকে এক লম্বা চুলওয়ালা ডাইনি বলছে, ‘তুই আমার আহার কেড়ে নিয়েছিস, তোর খবর আছে’। এরপর ওই কর্মচারী চাকরি ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী আবুবকর বলেন, এই পুকুরের নিচে উদ্ভিদের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা রয়েছে বলে শুনেছি। হয়তো সে কারণেই সাঁতার কাটতে গিয়ে অনেকে মারা যায়। শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্টের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এ ব্যাপারে হলের আবাসিক শিক্ষক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বাবুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছি এই পুকুরের পানিতে পানির যে মান থাকার দরকার তা নাই। পানিতে এইচ-২ রাসায়নিক কম আছে। আর বি২ নামের রাসায়নিক বেশি।
এই কারণে এই পানিতে ডুব দিলে প্রেসারের সমস্যা সৃষ্টি হয়। যাদের বেশি সমস্যা তারা মারা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, পানিতে গোসল করতে নামার পরে অনেকেই হার্ট-এটাক করে মারা যায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ.এম আমজাদ বলেন, পুকুরটিতে গোসল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে কি করা যায় তা চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে সিঁড়িগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ঢাবির শহীদুল্লাহ হলে রহস্যময় পুকুর
RELATED ARTICLES