সিগারেট বা ধূমপানের কুফল বলে শেষ করার মতো নয়। এটি একজন ধূমপায়ীর শারীরিক ক্ষতি যেমন করে তেমনি করে আর্থিক ক্ষতি। অন্যান্য নেশা দ্রব্যের মতো না হলেও এটিও এক ধরনের নেশা। তবে সিগারেট ত্যাগ করতে চাইলেই সফল হওয়া যায়। আজ আমরা দি ঢাকা টাইমসের পাঠকদের জন্য ধূমপান ত্যাগ করার সেই সব কৌশল তুলে ধরবো।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ধূমপান ত্যাগ করতে আগ্রহী এমন ব্যক্তিদের ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই সফল হয়েছেন। ধূমপান ত্যাগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সদিচ্ছাই যথেষ্ট। এটি একজন ধূমপায়ীকে ধূমপান ত্যাগ করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। তবে ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে আপনি কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। যা আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করবে।
১) ধূমপান ত্যাগ করার প্রথম ধাপে আপনি নিজেকে এই বলে প্রস্তুত করুন যে, কেন আপনি ধূমপান ত্যাগ করতে চাচ্ছেন? কিংবা ধূমপান ত্যাগ করা কেন আপনার জন্য জরুরী। তবে এইক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে ধূমপান করলে কি ক্ষতি হয়। এই জানাটুকু ধূমপানের বিরুদ্ধে আপনাকে মানসিক ভীতি তৈরি করবে। আসলে এই প্রশ্নটির মাধ্যমে আপনি নিজেকে নিজেই প্রস্তুত করবেন যে আপনি ধূমপান ছাড়বেন।
২) দ্বিতীয়ত যেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারেন তা হলো ধূমপানে কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা হয়, তার একটি তালিকা তৈরি করুন, লিখে রাখুন এবং এটি আপনার নিয়মিত চোখে পড়ে এমনভাবে রাখুন। এর মধ্যে কোন বিষয়টি আপনি সবচেয়ে বেশি ভয় পান, সেটিতে লাল চিহ্ন দিয়ে রাখুন। এই বিষয়টি আপনার ভেতরে ধূমপানের বিপরীতে একটি ভয় তৈরি করবে।
৩) এরপর নিজের ভেতরে একটি মানসিক তৃপ্তি তৈরি করুন যে, ধূমপান ত্যাগ করলে কী কী লাভ হতে পারে। তারজন্য একটি তালিকা তৈরি করুন। আপনার এই মানসিক তৃপ্তি আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে অনুপ্রাণিত করবে। আপনি যখনি এই লাভের কথা চিন্তা করবেন তখনি আপনার ভেতরে ধূমপানের বিপরীতে একটি মানসিক অবস্থান দাঁড়িয়ে যাবে।
৪) আপনি ধূমপান ছাড়ছেন কাউকে খুশি করার জন্য নয়, এই বিষয়টি মাথায় রাখুন। মনে করা যাক আপনি আপনার প্রেমিকার কথায় ধূমপান ছাড়লেন কিন্তু কয়েক মাস পর তার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল। এই সকল ক্ষেত্রে মানসিক ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই আবার ধূমপান শুরু করে। সবসময় মাথায় রাখুন আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্যই আপনি এটা করেছেন। এমন জোরালো অবস্থান নিন।
৫) একটি বিষয় মাথায় রাখুন ধূমপানের ফলে আপনার ভেতরে একটি দেহঘড়ি তৈরি হয়ে যাবে যা সময়ে সময়ে আপনাকে জানান দিবে নিকোটিন প্রয়োজন। এই জন্যই বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি একটি নেশার মতো। কোন ধরনের থেরাপি বা মেডিকেশন ছাড়া ধূমপান ছাড়া ঠিক নয়। কারণ সিগারেটের নিকোটিনের ওপর ব্রেইন অনেক ক্ষেত্রে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে হঠাৎ ধূমপান ছেড়ে দিলে শরীর অনেক সময় অস্থির হয়ে পড়ে। তাই সিগারেটের বিকল্প থেরাপির কথা চিন্তা করতে হবে। যেমন ধরা যাক আপনি নিয়মিত রাতের খাবারের পর ধূমপান করেন। এখন হঠাৎ ধূমপান ছেড়ে দিলে আপনি ঐ সময়টায় অস্থির হয়ে পড়বেন। তাই এই সকল ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে চুইংগাম, লজেন্স ব্যবহার করুন। দেখবেন কিছুদিন পর আপনার আর সমস্যা হচ্ছে না।
৬) একাকীত্ব ও মানসিক চাপ ধূমপানের অন্যতম কারণ। এগুলো দূর করতে চেষ্টা করুন। একাকীত্ব ও মানসিক চাপ দূর করতে বন্ধুদের সাহায্য নিন, বেশিরভাগ সময়টা তাদের সাথে থাকুন। তবে এইক্ষেত্রে যে সকল বন্ধুরা ধূমপান করে তাদের এড়িয়ে চলুন। টেনশন থেকে মুক্তির ভিন্ন উপায় খুঁজে নিন। ব্যায়াম,মেডিটেশন এবং গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।
৭) অনেকেই ধূমপান ত্যাগ করার পর কোন ধরনের পার্টি বা অনুষ্ঠানের ভারী খাবারের পর বন্ধুদের সাথে ধূমপান করে থাকেন। আপনার জন্য পরামর্শ থাকবে কখনোই নিজেকে প্রতারিত করবেন না। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, সিগারেট তো ছেড়েই দিয়েছেন কিন্তু আজকের দিনে একটি সিগারেট খেলে এমন কী ক্ষতি হবে। সাবধান এই ধরনের চিন্তা মাথার মধ্যে আনতে যাবেন না। একটা সিগারেট আপনার মধ্যে আরও সিগারেট খাওয়ার প্রলোভন তৈরি করবে। কিংবা আয়োজন অনুষ্ঠানে অন্যদের দেখাদেখি ধূমপান করতে যাবেন না।
৮) ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে একটি প্রচলিত বিষয় হলো তিনমাস বন্ধ করে থাকা যায়, তারপর আবার শুরু হয়। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে এই সকল ধূমপায়ীরা পরবর্তী চেষ্টায় সফল হয়েছে। যদি প্রথম চেষ্টায় আপনি সিগারেট ছাড়তে সফল না হন, তাহলে আবার চেষ্টা করুন। বেশিরভাগ লোক, যারা ধূমপান ছেড়েছেন, তারা চূড়ান্তভাবে সফল হওয়ার আগে কয়েকবার ব্যর্থ হয়েছেন। বেশিরভাগ ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়ার প্রথম তিন মাসের মধ্যেই আবার ধূমপান শুরু করে, এতে আশাহত হবেন না। আবার ছাড়ার চেষ্টা করুন দেখবেন সফল হবেন।