Monday, May 20, 2024
Google search engine
লাইফ ষ্টাইলই-সিগারেটের এপিঠ-ওপিঠ

ই-সিগারেটের এপিঠ-ওপিঠ

ইলেকট্রনিক সিগারেটগুলো প্রকৃতপক্ষে ধোঁয়ার পরিবর্তে বাষ্প তৈরি করে যা কোনো ক্ষতি করে না বলে ই-সিগারেট উৎপাদনকারীরা দাবি করে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দুইটি গবেষণার ফলাফল এগুলোর ব্যবহার ও সম্ভাব্য ক্ষতির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ইলেকট্রনিক সিগারেটগুলো প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের ব্যাটারি চালিত নিকোটিন ইনহেলার যা সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের মাঝে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেলিভিশন ও নানা অনলাইন বিজ্ঞাপন বিভিন্ন কৌশলে ইলেক্ট্রনিক সিগারেটকে “অনুশোচনামুক্ত ধূমপান মাধ্যম” হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। এমন দাবির পিছনে মূল কারণ হলো একদিকে এগুলো দেখতে যেমন প্রচলিত সিগারেটের মতো কিন্তু স্টাইলগত দিক থেকে উন্নত। অপরদিকে এটি ছাই বা ধোঁয়ার পরিবর্তে নিকোটিন ও ফ্লেভার তৈরিকারী পদার্থের বাষ্প তৈরি করে। এছাড়াও এটি প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় কম পরিমাণ নিকোটিন সরবারাহ করে বলে অনেকে একে ধূমপান বন্ধে একটি সাহায্যকারী মাধ্যম হিসাবে দেখছে, ফলে তরুণদের মাঝে এর প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। গবেষণায় জানা গেছে যারা ধূমপান ছাড়তে চান তাদের এটি সাহায্য করলেও এর ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকও আছে।

খুব দ্রুত ই-সিগারেটের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল নিয়ে গবেষণা দরকার। The Lancet নামক স্বনামধন্য প্রথম সারির বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত ছয়মাস ব্যপী এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয় পরিসংখ্যানগতভাবে ই-সিগারেট ধূমপায়ীদের ধূমপানের নেশা ছাড়াতে নিকোটিন প্যাচের ন্যায় কার্যকরী। কিন্তু এটি ছিল ই-সিগারেট ও অন্য একটি ধূমপান আসক্তি নিবারক মাধ্যমের মধ্যে তুলনা নিয়ে করা প্রথম গবেষণা। এই গবেষণার প্রধান গবেষক ইউনিভার্সিটি অব অকল্যান্ডের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ ইনোভেশনের ডাইরেক্টর Chris Bullen সতর্ক করে বলেন “এখনও ই-সিগারেটের কার্যকারিতা ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই জানা বাকি যা নিয়ে গবেষণা করা এই মুহূর্তে আমাদের জন্য খুবই দরকার”। Alexander Prokhorov নামে Houston’s MD Anderson Cancer Center এর অপর একজন ধূমপান নিবারণ বিশেষজ্ঞ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন

যেহেতু ই-সিগারেট ব্যবহারে প্রচলিত ধূমপানের রূপ ও নীতি সবই অনুসরণ করা হয় এবং ধূমপায়ীর নিকোটিনের ন্যায় ক্ষতিকর বস্তুর প্রতি আসক্তি রয়েই যায় সেহেতু ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করার বদলে হয়ত এমন হতে পারে যে ধূমপায়ী প্রচলিত ধূমপান ছেড়ে ই-সিগারেট দিয়ে ধূমপান শুরু করতে পারে। সেই সাথে পূর্বের ধূমপান পদ্ধতিতে ফেরত যাবার আশঙ্কা তো থাকছেই।
এটি কি সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত বিকল্প?

যদিও ই-সিগারেটকে প্রচলিত সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত বিকল্প মনে হচ্ছে কিন্তু আসলে এটি আংশিক সত্য মাত্র। University of California, San Francisco এর Center for Tobacco Control Research and Education এর ডিরেক্টর Stanton Glantz বলেন, “ই-সিগারেটে সাধারণ সিগারেটের তুলনায় তামাক পুড়িয়ে উৎপন্ন ক্ষতিকর পদার্থের তুলনায় প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ পরিমাণ ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। তবে তাতে নিকোটিনের পাশাপাশি আরও অনেক ক্ষতিকর পদার্থ ও অতিসূক্ষ্ম পদার্থ থাকে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় ধরনের ধূমপায়ীর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও যারা ই-সিগারেট ব্যবহার করে তারা প্রচলিত সিগারেটও ব্যবহার করে ফলে ধূমপানের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব থেকেই তারা মুক্ত নয়”। অপরদিকে Glantz ও Prokhorov উভয়ই ই-সিগারেটের মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। চিকিৎসা প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত নিকোটিন প্যাচের মতো ই-সিগারেটের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। এছাড়া গণস্বাস্থ্যে এগুলোর সম্ভাব্য উপকারিতা ও ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। সব কথার শেষ কথা নিকোটিন প্যাচ অপেক্ষা ই-সিগারেট কোনো অংশে খারাপ না হলেও ভালোও নয়।

তবে কী এটি তরুণদের নেশার রাজ্যে প্রবেশের নতুন দ্বার?

আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের করা গবেষণায় দেখা গেছে হাই স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের পরিমাণ ২০১১-১২ সালের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এই পরিসংখ্যান প্রকৃতপক্ষে সামনের ভয়াবহ দিনের পূর্বাভাস দেয়।

ধূমপায়ীদের মধ্যে প্রায় ৯০% শতাংশই অল্প বয়সে ধূমপান শুরু করে। ই-সিগারেট অসংখ্য ফ্লেভারের জন্যও এই অল্পবয়সীদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে এটি একদিকে যেমন তরুণদের মধ্যে প্রচলিত সিগারেট পুড়িয়ে ধূমপানের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় অন্যদিকে জীবনভর নিকোটিনের মতো মাদক দ্রবের উপর নির্ভরশীল করে তোলে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের এই জনপ্রিয়তা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া খুব বেশি সহজ হবে না। একদিকে এই ই-সিগারেটের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে অপরদিকে ধূমপান বিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে বাজেট স্বল্পতা। সেই ১৯৫০ এর দিকে সিগারেটকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন মাধ্যমে যেভাবে জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছিল ই-সিগারেট ব্যবহারকে এখন ঠিক একইভাবে ইউটিউব থেকে শুরু করে সকল মিডিয়াতে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা যখন ধূমপানমুক্ত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছি ঠিক সেই সময়ে ১৯৫০ এর দিকে ফিরে যাওয়া হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বড় দুর্ভাগ্য।

আরও পড়ুন-

এমন আরও কিছু আর্টিকেল

Google search engine

জনপ্রিয়