Sunday, October 13, 2024
Google search engine

সবে মাত্র কলেজে উঠেছি একটু অন্যরকম অনুভুতিতো কাজ করবেই।

লেখা-লেখির অভ্যাস আমার মটেও নেই বা আমি যে লিখতে পারি তাও না। তবুও মানুষ নিজের অজান্তেই অনেক কিছু লিখে ফেলে। আমার লেখার ধরনটা অনেকটা এরকমি। যদিও আমার লেখা কেও পড়ে না। তারপরেও লিখি, কেও পড়ুক আর না পড়ুক লিখতে তো আর মানা নেই। তবে আমি লিখছি নিজের সন্তুষ্টির জন্য।

সে অনেক আগের কথা, তাও হবে হয়তো ২০০৫ সাল আথবা তারও আগের। সঠিক সালটার কথা ঠিক মনে নেই। তবে এর কাছাকাছি কোন এক সাল হবে। আমি তখন কলেজ ফাস্ট ইয়েয়ারে পড়ি। সবে মাত্র কলেজে উঠেছি একটু অন্যরকম অনুভুতিতো কাজ করবেই। শুধু আমার নয়, আমার মত সব বয়সী ছেলেমেয়েদের এরকম অনুভুতি কাজ করে। কলেজ শুরু হল। ক্লাসও নিয়মিত হচ্ছে। কলেজ ছুটি শেষে বন্ধুরা বিকেলে সবাই এক সাথে হই। আমরা কিছু বন্ধু ছিলাম অনেক কাছের। তার মধ্যে সহেল,শাহাদাত ওরা ছিল আরও বেশী কাছের। ওই সময় আমাদের কারও হাতে মোবাইল ছিল না। কারণ আমরা সবাই একই রকম ছিলাম। মানে হল সবারই খালি পকেট। কলেজে পড়ি মোবাইল কেনার মতো টাকা কাররই ছিল না। যদিও ওই সময় আমিই সবার আগে মোবাইল কিনি কারণ আমি আগে থকেই টিউশনি করাতাম। তারপর ধীরে ধীরে আমার বন্ধু সোহেল,শাহাদাত ওরা সবাই কেনে। নতুন মোবাইল সবারই অন্যরকম একটা ব্যাপার। দিন গুলো ভালই যাচ্ছিলো। একদিন আমরা বন্ধুরা সবাই একসাথে আড্ডা দিচ্ছি, দেখি সোহেলের মোবাইল বেজে উঠলো। ও কলটা রিসিভ করে দেখি আমাদের থেকে এমন ভাবে আলাদা হল যাতে ব্যাপারটা আমরা টের না পাই এরকম। অনেক ক্ষণ কথা বলা শেষে ও হাজির হল। আমরা সবাই মিলে ওকে ধরলাম মামা ব্যাপারটা কি খুলে বল। না হলে খবর আছে। ও বললো আরে কিছু না গ্রাম থেকে খালা ফোন দিয়েছে আম্মার সাথে কথা বলবে তাই বললাম খালা আমি বাহিরে আছি।আমরা সবাই ব্যাপারটা নিয়ে আর আগালাম না। ও আরেকটা কথা না বললেই না সোহেল আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে। আর সেই জন্যেই ওর সাথে আমার সময়টা বেশী কাটে। আমরা বেশিরভাগ সময় এক সাথে থাকি। একদিন রাতের বেলা বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে আমি বাসার ছাদে উঠলাম। উঠে দেখি বন্ধু আমার কার সাথে জানি মোবাইলে কথা বলছে। আমাকে দেখে কথা আর থামালও না। কিছুক্ষণ আরও কথা শেষ করে আমার কাছে আসলো। তারপর আমি ওকে বললাম ওই ব্যাপারটা কি বলত? ঘোটনা কি জলদি বল। দোস্ত আমি একটা মেয়ের সাথে কিছুদিন হল কথা বলি। ওর সাথে কথা বলতে আমার ভালই লাগে। আমি বললাম তাই নাকি।তাহলে ঐ দিন এটাই তোর খালার ফোন ছিল তাই না। হম, হারামি তুই দেখি কোন কিছু ভুলিস না। আমি একটা পার্ট নিলাম, বুঝতে হবে। তারপর ওকে জিজ্ঞাস করলাম, মেয়েটা কে? বাসা কই? নাম কি?জলদি বল? আরে দ্বারা দ্বারা আস্তে আস্তে উত্তর গুলি দেই। বললো মেয়েটির নাম সৃতি। আমি বললাম,বাহ! ভাল নামতো।হম, তবে ও থাকে খুলনায়। আমি শুনে আবাক হলাম। বললাম তুই ওকে দেখছিস কই।? দোস্ত দেখি নাই। তো নাম্বার পেলি কিভাবে? ও বললো নাম্বার মানেজ করছি কোন একভাবে। দোস্ত সুধু কথা বলি তেমন কিছু না। কথা বলতে ভাল লাগে তাই। আমি বললাম ঠিক আছে। মাঝে মাঝে এখন ছাদে উঠলেই দেখা যায় সোহেল মেয়েটির সাথে মোবাইলে কথা বলছে।আমার মাঝে মাঝে একটু খাপারি লাগতো। বন্ধু একটা মেয়ের সাথে অনেক সময় ধরে কথা বলছে আর আমি বসে বসে ছাদে মশা মারছি। এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর এক দিন সোহেল আমাকে বললো দোস্ত মেয়েটা তো দেখা করতে চায় ? আমি বললাম কেন তুই চাস না ? হম আমিও চাই। কারণ আমরা দুইজনই অনেক দূর এগিয়ে গেছি। হম জটিল কেস তাহলে। তো কবে যাবি ভাবছিস? সামনে কলেজ ছুটি আছে তখন যাই চল। সোহেল বললো দোস্ত গিয়ে থাকব কই ? আমি বললাম টেনশন নিস না। খুলনাতে আমার খালাতো বোন থাকে। দুলা ভাই ওখানে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কাজ করে। তবে সোহেল শাহাদাতকে ব্যাপারটা না জানানোর জন্য বললো।কারন শাহাদাত বরাবরি এইসব ব্যাপার গুলতে অনেক সিরিয়াস। তাই ওকে আর জানালাম না। কলেজ ছুটি হল। উদ্দেশ্য আনুযায়ই আমরা খুলনায় রওনা হলাম।রাতের ট্রেনে চড়ে সকালে খুলনা পৌছালাম। দুলা ভাই আমাদের রিসিভ করে বাসায় নিয়ে গেল।আর এর মধ্যে যে কতবার ওদের দুজনের মধ্যে কথা হয়ে গেছে তা কেও পাশে না থাকলে বুঝবে না। খুব গভীর প্রেম।কথা শুনলেই বুঝা যায়।তারপর দুলা ভাই আমাদের খুলনা শহর ঘুরে ঘুরে দেখালো। খুলনা নিউমার্কেট, স্বর্ণকমল,রূপসা ব্রিজ,খুলনা ভার্সিটি,চিরিয়াখানা,মংলা,বাগেরহাট ইত্যাদি অনেক কিছু দেখলাম। সৃতি এতদিন খুলনায় ছিল না। কারণ ওর খালা আসুস্থ ছিল, তাই ওরা সবাই সাথক্ষীরা গিয়েছিলো। আমরা ব্যাপারটা জানতাম। আমাদের হাতেও অনেকটা সময় ছিল তাই আমাদের ঘুরতে কোন সমস্যাই ছিল না। কিন্তু আমার বন্ধুর কয় দিন অনেক কষ্টে কেটেছে। ওটা ওকে দেখলেই বঝা যায়। যাই হোক অপেক্ষার পালা এবার শেষ। সৃতি এখন খুনলাতে। বন্ধুর উত্তেজনাও চরমে। আমিও একটু একটু ছিলাম। দেখা করার ডেট ধার্য করা হল। স্থান খুলনা নিউ মার্কেট। আজকে আমার বন্ধু যেরকম ভাবে সেজেছে তা দেখলে যে কোনো মেয়ে ফিট হয়ে যাবে। দুলা ভাইতো বলেই ফেললো কি ব্যাপার আজকে কি তোমাদের কোন ডেটিং আছে নাকি। না দুলা ভাই এমনি ভাবলাম একটু ঘুরে আসি। আমাকে যেতে হবে নাকি তোমাদের সাথে? না ভাইয়া আমরা একাই যেতে পারবো। এই বলে বের হয়ে গেলাম। যথা সময়ে নিউ মার্কেটে। উত্তেজনায় ঘাম ঝরছে। আমার বন্ধুর তো মোবাইল কান থেকে নামাছেই না। সৃতি এখনও নিউ মার্কেটে আসেনি। আমরা এখনও অপেক্ষায় কাক হয়ে আছি। একটু পর পর পানি খায় আমার বন্ধু। সৃতি আসছে ওর একটা অ্যান্টির সাথে। আমার বন্ধু আমাকে বললো ওরা নাকি নিউ মার্কেটে এসে গেছে। এখন সুধু মুখ-মুখি হবার পালা। ওরা মোবাইলে কথা বলতে বলতে সামনা সামনি আসছে। আমি বললাম দোস্ত তারা তারি পালা,দৌড়া বাঁচতে চাইলে। দোস্ত কি হয়েছে। সামনে দেখ আগে। ইয়া লম্বা কালো সুন্দরি,দেখতে অনেকটা জলহস্তীর মতো। রাতের আধারে বের হলে ওকে চেনা যাবে না।
কারণ রাতের রঙ আর ওর রঙ একই। আমরা দুজনই একটা দৌড় দিলাম। কিছু দূর গিয়ে আমার বন্ধু বললো, না দোস্ত এটা ঠিক হচ্ছে না । এতদুর এসেছি আন্তত কথা বলে যাই। আমি বললাম তুই যা আমি এখানে আছি।হম তারপর ওরা কিছু ক্ষণ কথা বললো। আমরা যে যার মতো বাসায় চলে গেলাম। আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো কিন্তু বন্ধু কষ্ট পাবে বলে হাসি নাই। ওর এমনিতেই বারোটা বেজে গেছে। দোস্ত কথা দে ব্যাপারটা কেও যাতে না যানে। আমি বললাম ঠিক আছে। তারপর আমার বন্ধু মোবাইল সুইচ অফ করে রাখলো। আমরা ঢাকা ফিরে যাচ্ছি । যাবার বেলায় আমি ওর দিকে তাকাতেই ও হেসে ফেললো । পরে আমার বন্ধু সৃতির সাথে আর যোগাযোগ করেনি।সৃতিও চেষ্টা করেনি। আর এটা কখনও হয় না কারণ মেয়েটার থেকে আমাদের বয়সের ব্যবধান অনেক বেশী ছিল। তবে ব্যাপারটা মনে পড়লে আমরা এখনও হাসি। পরে অবশ্য সবাই ব্যাপারটা জেনে যায়। আমি এখনও ওকে মাঝে মাঝে বলি দোস্তো চল খুলনা যাই। এখনকার দিনে এসব ব্যাপার গুলো আর হয় না । কারণ এখন টেকনোলজি অনেক আধুনিক হয়ে গেছে। সবাই এখন একজন আর একজন এর সাথে দেখা করা, কথা বলা ইত্যাদি নানা কিছু খুব সহজেই করতে পারে।আমাদের মতো ঘটনা এখন আর তেমন ঘোটে না। আসলেই জীবনের কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যা কিনা সৃতি হয়েই রয়ে যায়……।!!!!!


“গাধা বন্ধু”

আরও পড়ুন-

এমন আরও কিছু আর্টিকেল

Google search engine

জনপ্রিয়